স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঈদে যাত্রাপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী সাধারণ অস্বাভাবিক হয়রানীর শিকার হচ্ছে দাবী করে অবিলম্বে এই নৈরাজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বুধবার সংগঠনের পক্ষে আয়োজিত “ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানী বন্ধের দাবীতে” আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন টিকেট অব্যবস্থাপনা, সড়ক অব্যবস্থাপনাসহ ঈদ যাত্রার নানাক্ষেত্রে গলদ থাকায় যাত্রীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
ভাড়া নৈরাজ্যে প্রতিরোধে বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে ভিজিল্যান্স টিম বা মনিটরিং কমিটি গঠনের করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোথাও তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা রাস্তায় আহাজারি করলেও কারো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটক যাত্রীরা রাস্তায় ইফতার বা সেহেরী করতে পারছেনা। এইসব দূর্ভোগের শিকার যাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আহব্বান জানিয়েছে যাত্রী স্বার্থ সংরক্ষণকারী এই সংগঠন।
যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সম্প্রতি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে চলাচলরত যাত্রীদের চাহিদার বিপরীতে স্বাভাবিক সময়ে গণ-পরিবহনে ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার বা জোড়া সরকারি ছুটির আগের দিন এই ঘাটতির পরিমাণ ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশে পৌঁছায়, প্রতি ঈদে ২২ রমজান থেকে ২৭ রমজান পর্যন্ত এই গণপরিবহনে ঘাটতির পরিমাণ ৭৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ হলেও ২৭ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত বিদ্যমান গণপরিবহনের ৪ গুণ বেশি যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এই সময় যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের সংকট দাঁড়ায় ৩৭৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদে এই সংকটকে পুঁজি করে ঘটে থাকে নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও হয়রানি বানিজ্য। প্রকৃতপক্ষে গণপরিবহনের চাহিদার বিপরীতে বিশাল ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে আমাদের সরকার, প্রশাসন, পুলিশ, মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে গলদঘর্ম হতে হয়। এইবারের ঈদে লম্বা ছুটি কাজে লাগাতে ঢাকা থেকে ৮০ লাখ, চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ২২ লাখ, সিলেট থেকে ৬ লাখ, খুলনা থেকে ১২ লাখ, রাজশাহী থেকে ৮ লাখ, বরিশাল থেকে ৪ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। এর মধ্যে ৩ লাখ যাত্রী ওমরা পালন সহ বিদেশে ঈদ ভ্রমণ করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরো প্রায় সোয়া ২ কোটি যাত্রী। এসব যাত্রী ৫৮ শতাংশ সড়ক পথে, ২৫ শতাংশ নৌ পথে, ১৪ শতাংশ রেল পথে, ৩ শতাংশ আকাশ পথ ব্যবহার করবে।
দেশের প্রায় প্রতিটি মহাসড়কে চলমান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, বিভিন্ন মহাসড়কে রাস্তার মাঝে প্রবল বর্ষনের কারণে সৃষ্ট গর্ত, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার, বিভিন্ন রোডের বিভিন্ন স্পটে রাস্তার উপর বসা হাটবাজার, মহাসড়কে চলাচলকারী অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সাসহ অযান্ত্রিকযান এইবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। এ ছাড়াও নৌ-পথে দুর্যোগপূর্ণ মৌসুম চলছে। তাই নৌ-পথে ওভারলোড কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা না হলে দূর্ঘটনায় প্রাণহানির ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজমান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকরাম আহমেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ব্যারিষ্টার মোঃ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি রুস্তম আলী খান, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক হোসেন আহমদ মজুমদার, ঢাকা অটোরিক্সা চালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সামসুদ্দীন চৌধুরী, জিয়াউল হক চৌধুরী প্রমুখ।
পাঠকের মতামত: